সেই দুটি চোখ

প্রিয়ার চাহনি (মে ২০১২)

রোদের ছায়া
  • ৩০
  • ৪৩
সামনের সারির বাম দিকে বসা মেয়েটি অনেকক্ষণ হলো কিংশুকের দিকে তাকিয়ে আছে , মেয়েটির চোখ দুটোর দিকে বেশিক্ষণ তাকাতে পারছে না কিংশুক ।গভীর কালো চোখ আর এমন তীব্র চাহনি ও আগে কখনো দেখেছে কিনা মনে করতে চেষ্টা করলো । চোখ দুটো অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়েই আছে কিংশুকের দিকে ।

এত সুন্দর চোখ কারো হয় ? ভাবতে ভাবতে লেকচার খাতায় কিংশুক চোখের ছবিও এঁকে ফেলল, আর তখনই দিলীপ স্যার তাঁর গম্ভীর কন্ঠে লেকচার শেষ করে কিংশুকের দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করলেন ............''শেষ বেঞ্চ , কালো শার্ট ....আজ কি পড়ানো হলো বল দেখি?''

ক্লাসের সবাই ওর দিকে তাকিয়ে আছে , কিন্তু কিংশুক কিছুতেই মনে করতে পারল না স্যার এতক্ষণ কি পড়াচ্ছিলেন । হটাত কোথায় যেন প্রচন্ড শব্দে কিছু ভেঙ্গে পড়ল , ক্লাসের সবাই হুরমুর করে বের হতে লাগলো , কিংশুকের চোখ খুজঁতে লাগলো সেই চোখ জোড়া, কিন্তু কোথায় গেল মেয়েটা ! ঘুম ভেঙ্গে গেল কিংশুকের , আর আজকেও ফজরের আজান শুনলো ও ।

আজ নিয়ে পর পর চার দিন প্রায় একই স্বপ্ন দেখে ঠিক এই সময়ে ঘুম ভাঙ্গে যাচ্ছে কিংশুকের । বিষয়টা নিয়ে কারো সাথে যে কথা বলবে সেটাও বলা যাচ্ছে না । বন্ধুরা সব যা বিচ্ছু , এই কথা জানলে আর এক মুহূর্ত শান্তিতে থাকতে দিবে না সেটা ভালই জানে কিংশুক।
কিন্তু এমন অদ্ভুত সুন্দর চোখের কোনো মেয়ে আগে কোথাও দেখেছে বলে তো মনে পরছে না , তাহলে স্বপ্নে কিভাবে এলো ?

আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে পড়ে ও, তৃতীয় বর্ষের শেষ দিকে এসে একি যন্ত্রণা শুরু হলো.... কিংশুক ভেবে পায় না ।বিশ বছরের জীবনে কখনো প্রেমে পরার কথা ভাবেও নাই , কাওকে সেভাবে ভালো লাগেও নাই , বন্ধুদের নানা রকম উপদেশ , হাসি ঠাট্টা উপেক্ষা করে এত দিন ভালই ছিল সে । কিন্তু এখন কিভাবে কি করবে , কোথায় খুঁজবে সেই চোখ ? চোখের প্রেমে পরে গেল নাকি সে...নিজের মনেই ভাবে কিংশুক , কিন্তু কার এই অপরূপ চোখজোড়া ?

স্বপ্নে শুধু চোখ দেখেছে কিন্তু চোখের মালিককে দেখেনি ,কতবার চেষ্টা করেছে স্বপ্ন মনে করার কিন্তু লাভ হয়নি , চোখদুটি শুধু মনে পরে আর কিছু না। কার চোখ হতে পারে , সুমনার নাকি জয়ার কিংশুকের ভাবনার এখন শুধু দুটি চোখ । ওদের ক্লাসের জয়ার চোখ বেশ সুন্দর , সিহাব তো গত বছর পিকনিক এ জয়ার চোখ নিয়ে একটা কবিতাই লিখে ফেলেছিল , আর তারপরই তো জয়ার সাথে সিহাবের সম্পর্কের শুরু ।

পড়াশোনা মাথায় উঠেছে , ভার্সিটি যেতে আসতে সারাক্ষণ কি যেন খুঁজে বেড়ায় ছেলেটা , খাবার টেবিল এ বসেও খাবারে মন থাকে না , আর ঘুম সেতো সোনার হরিণ , শুধু শেষ রাতে কিছুক্ষণের জন্য চোখের পাতা এক হয় আর তারপরই সেই স্বপ্ন দেখে ঘুম ভাঙ্গা, গত কিছু দিন এই হলো কিংশুকের রুটিন । স্বপ্নে দেখা এক জোড়া চোখ কিভাবে একজনকে এতটা এলোমেলো করে দিতে পারে ।

শেষ পর্যন্ত গতকাল রবিনকে প্রশ্নটা করেই ফেলল ..

কিংশুক: রবিন দেখতো কেও তাকিয়ে আছে কিনা ?

রবিন: কি বললি ? কে তাকিয়ে আছে?

কিংশুক: আরে বাবা সেটাই তো দেখতে বলছি, দূর থেকে কোনো মেয়ে দেখছে কিনা একটু দেখনা দোস্ত ।

রবিন: কোনো মেয়ে? কে রে বলনা ? কাওকে বলবনা খোদার কসম ।

কিংশুক: রাখত তো তোর ফাজলামি , সত্যি করে বলনা কেও আমাকে দেখছে কিনা ।

রবিন: কি আমি তো কাওকে দেখছি না , কারো আসার কথা নাকি?
কিংশুক: না না সেরকম কিছু না , এমনি বলছিলাম ।

রবিন: এমনি বলছিলি মানে? আমি কি ঘাস খাই নাকি ? কেও তোকে দেখবে আর সেটা এমনি এমনি , এ আবার কেমন কথা ?
বলনা ভাই কে সেই দেবী যে তোর পাথর বুকে প্রেমের কলি ফুটাল?

কিংশুক : সত্যি বলছি রবিন কিছুই না , একটা স্বপ্ন , এক জোড়া চোখ এই আরকি ।

রবিন: কিংশুক তুই ব্যপারটা খুলে বলনা , আমাকে তো সব কথা বলিস , এটা আবার লুকাচ্ছিস কেন?

কিংশুক: লুকালাম কোথায় , এখনো বলার মত কিছু তো হয়ই নাই ।

রবিন: না বলার মত যেটুকু হয়েছে সেটাই বলনা শুনি , চাই তো আমি তোকে সাহায্যও করতে পারি ।

হুম , তাহলে তোকে খুলেই বলি .........কিংশুক গত কয়েক দিনের স্বপ্নের কথা রবিনকে বলল, শুনে রবিনের সেকি হাসি। যেন এমন আজব কথা এই জন্মে শুনে নাই ।

এই জন্যই বলতে চাচ্ছিলাম না .........মন খারাপ করে বলল কিংশুক । দোস্ত মন খারাপ করিস না , কি করতে হবে তাই বল রবিনের প্রশ্নের জবাবে কিছু বলতে পারে না কিংশুক । আচ্ছা রবিন তোর দেখা সব চেয়ে সুন্দর চোখ কার বলত ..জানতে চায় । কেন সুমনা, জয়া, ঝুমুর সবার চোখই তো সুন্দর জানায় রবিন । কিন্তু খবরদার ঝুমুরের দিকে তাকাবি না আগেই বলে দিলাম ...ঝুমুর শুধু আমার ....রবিনের কথায় হেসে উঠে কিংশুক ।

ঠিক আছে চল ক্লাসে যাই , এমনিতেই দেরী হয়ে গেছে অনেক । কলা ভবনের দ্বিতীয় তলায় ওদের ক্লাস হয় , ঠিক সিঁড়ির কাছে আসতেই কিংশুকের চোখ আটকে যায় সামনে দাঁড়ানো মেয়েটির দিকে । এই তো সেই চোখ , এত দিন যা স্বপ্নে দেখেছে সে।সবুজ জমিনে গোলাপী আর কমলার কাজ করা শাড়ী পরা মেয়েটি কি ওদের সাথেই পড়ে ? আগে তো দেখে নি কখনো !

রবিনকে চোখের ইশারায় বুঝিয়ে দেয় কিছু একটা , রবিন ও বড় বড় চোখ নিয়ে তাকিয়ে থাকে মেয়েটির দিকে ।কয়েক মুহূর্ত নাকি কয়েক ঘন্টা কেটে গেল জানে না কিংশুক .......শুধু আমতা আমতা করতে থাকে । হাত দুয়েক দূরে দাঁড়ানো মেয়েটিও যেন কি করবে বুঝতে না পেরে কিছুক্ষণের জন্য সিঁড়ির গোড়াতেই দাঁড়িয়ে থাকে ।হটাত মোবাইল ফোন এ একটা সুন্দর গানের সুরে ঘোর কাটে সবার । মেয়েটি এক পাশে সরে যায় ফোন রিসিভ করার জন্য, কিংশুক আর রবিন সিঁড়ির দিকে পা বাড়ায় ।

ক্লাসে বসেও আনমনা হয়ে আছে কিংশুক , আর রবিন বন্ধুদের কাছে এই নাটকীয় গল্পের কথা খুব আয়েশ করে বলতে শুরু করেছে , ঠিক এই সময় ৩০২ কোর্সের ক্লাস নিতে রুমে আসেন কিছুক্ষণ আগে দেখা মেয়েটি ।উনি কি তাহলে আমাদের টিচার ? প্রশ্নটা কিংশুকের মুখ ফসকে বেরিয়ে যায় অসাবধানে ।
'' কেও কিছু বলছ? '' মিষ্টি গলায় জানতে চান নতুন ম্যডাম ।আমি আজ থেকে তোমাদের ৩০২ কোর্স নেব , সবাই মনোযোগ দিবে আশা করছি ।

কিন্তু কিংশুক ম্যডাম কি পড়াচ্ছেন শুনতে পাচ্ছে না , ওর হাত চলছে দ্রুত , একটা ছবি আঁকতেই হবে এই চোখের , ছবিতে ধরে রাখতে হবে এই গভীর চাহনি। ছোট বেলায় শেখা ছবি আঁকা বিদ্যাটা কাজে লাগাতে কিংশুক মরিয়া হয়ে উঠে ।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
স্বাধীন অনেক সুন্দর গল্প। ভাল লাগলো।
মোঃ শামছুল আরেফিন গল্পের শেষে এসে একটা চমক পেলাম। কলেজে থাকতে আমার এক বন্ধু আমাদের বায়োলজি ম্যাডামের প্রেমে পড়েছিল। সে কাহিনী নিয়ে একটি গল্প লিখব লিখব করেও লিখা হয়নি এখনও। আপনার গল্পটি ভাল লাগলো। লেখা সাবলীল। সহজ ও সাচ্ছন্দ ভঙ্গিতে এগিয়ে গেছে লেখা। একটা মসৃণ গল্প। অনেক অনেক ভাল লাগলো।
সালেহ মাহমুদ ওয়াও, সত্যি বলছি মাইরী, আমার ক্ষেত্রে এরকমটি ঘটলে আমি ক্লাস শেষে ম্যাডামকে বলেই ফেলতাম- "ম্যাডাম আপনার চোখ দু'টো আমি অনেকদিন যাবত স্বপ্নে দেখছি।" তাতে যা হবার হতো। অসম্ভব ভালো লাগলো। তবে গল্পটি শেষ হয় নি বলেই মনে হয়েছে আমার কাছে। ধন্যবাদ।
সালেহ ভাই , মেয়ে হয়ে ছেলেদের নিয়ে লেখার এই হলো মুস্কিল .....আমি কিভাবে জানব বলেন সত্যি সত্যি একট ছেলে এক্ষেত্রে কি করত / আর গল্পের শেষটা পাঠক যেভাবে ভাববে আমি হয়ত সেভাবে দিতে পারব কিনা সেই ভয়ে আর ....আপনাকে অনেক ধন্যবাদ গল্পে আসার জন্য /
ধন্যবাদ রোদের ছায়া। আসলে গল্পটি ভালো লেগেছে বলেই এত কথা। নয়তো এক কথায় মন্তব্য শেষ হয়ে যেতো। আমি আমার কথা বলেছি। এটাই যে আপনাকে করতে হবে তেমনটি নয়। আর আপনি সত্যি সত্যি একজন ছেলের মনস্তত্ব অসাধারণ দক্ষতায় ফুটিয়ে তুলেছেন। আচ্ছা আপনি কি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং বাংলা বিভাগে পড়াশোনা করেছেন?
কেন মনে হলো বাংলা বিভাগ ? আমি international relations এর ছাত্রী ছিলাম DU তে , আপনার সাবজেক্ট কি ছিল ?
গল্পের ভেতর ক্লাসরুমের বিবরণ দেখে মনে হচ্ছিল ওটা ২০১ নম্বর ক্লাসরুম। বাংলা বিভাগ মনে হচ্ছিল কোর্সের নম্বর দেখে। আসলে ওরকম কোর্স নম্বর তো সব বিভাগেই আছে সেটা ভুলে গিয়েছিলাম। আমি বাংলা’র ছাত্র।
অজয় অলপতেই গল্পটা অসাধারণ .................... গল্পটা আমাকে অনেক কিছু মনে করিয়ে দিল .......................
সত্যি? তা কি মনে করলো ? ধন্যবাদ অজয় ....take care
আবু ওয়াফা মোঃ মুফতি স্বপ্নের চোখ চোখরে..! ভালো লাগলো|
ধন্যবাদ আবু ওয়াফা মুফতি ভাই ...
তানি হক সর্বনাশ ম্যাডাম !..এখন কি হবে ...আপু ..ইশ আর একটু যদি লিখতেন .. এর পর কি হবে জানতে ইচ্ছে করছে ..যাই হোক গল্পটা ভীষণ ভালো লাগলো ..অপুকে সুভেচ্ছা জানাই..
তানি আপনাকে ধন্যবাদ , অনেক ধন্যবাদ .........
rakib uddin ahmed পলাশ ফুল কী আর পারবে, রজনীগন্ধার মত সুবাস বিলিয়ে যেতে....? অস্পৃশ্যে ভালবাসা,সে তো হৃদয়-নীলিমায় দিগাঙ্গনা.....!সেই হৃদয়- চাহনির কোন নতুনত্ব নেই,নেই পুরাতন,জগৎ-সংসারে হতে পারে তা অলীক কল্পনা......! গল্পের বিষয়বস্তু অনন্যা.....! কিন্তু..... কিছু ফ্যাক্ট রাখতে পারতেন(আমার মনে হয়)/ তবে নান্দী ও ভরতবচন, উভয়ই অপরূপা.....! / নক্ষত্র four ....!
অনেক ধন্যবাদ শেষ পর্যন্ত গল্পটিতে এলেন ........মন্তব্যে কিন্তু বোঝা গেল না আপনার কেমন লেগেছে ......ভালো থাকবেন ..
.....আপনাকেও ধন্যবাদ....! এ সংখ্যাটা আমার সবচেয়ে পছন্দের ছিল,তাই প্রিয় লেখকদের লিখা অবশ্যই পড়ব.....! গল্পের থিম,উপস্হাপনা-গঠনশৈলীও বেশ ভাল লেগেছে। কিন্তু মাঝখানে কিংবা শেষে কোন ঘটনা তো পেলাম না....! আর কিছুটা যদি ঘটনা পেতাম....... গল্পের নায়কের কিছুটা স্বপ্নের ব্যাখ্যা/তাদের উভয়ের যোগাযোগ এর বিষয়..../ বর্তমান ফিনিশিং দেখে খুব অস্হির লাগছে...... এর নেক্সট ভার্সন কি আশা করতে পারি?/ আপনিও ভাল থাকবেন...../.... (হা.. হা.. হা...)আর মন্তব্যটা বলেছি ....গল্পে বেচারা নায়কের হৃদয়ানুভূতির স্মরণে!
রাকিব ভাই আপনার সবচেয়ে পছন্দের সংখ্যা তে আপনার কোনো লেখা নেই কেন ? যাক এবার গপ্লে আসি , টিচারের সাথে ছাত্রের প্রেম কি বাস্তবে খুব বেশি দেখা যায় ? তাই গল্পেও সেটা দেখায় নি আর এটা বোধ হয় সম্ভব ও না / অনেক ধন্যবাদ আপনাকে , আর পরের সংখ্যা তে অবশ্যই লিখবেন ......
মোহাম্মদ ওয়াহিদ হুসাইন .......................চমতকার গল্পটা, বৈচিত্র আছে, ভাল লিখেছেন। শুভেচ্ছা রইল।
আমার দুটো লেখাতেই আপনার সুন্দর মন্তব্য পেয়ে আনন্দিত হলাম ...অনেক অনেক ভালো থাকবেন ...
আহমেদ সাবের প্রাঞ্জল লেখা। চমৎকার রোমান্টিক গল্প।
সাবের ভাই অসংখ্য ধন্যবাদ ......ভালো থাকবেন ........

১৭ আগষ্ট - ২০১১ গল্প/কবিতা: ৪৮ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "স্থিতিশীলতা”
কবিতার বিষয় "স্থিতিশীলতা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪